#The_Magic_Of_Love
#পর্বঃ১২,১৩,১৪,১৫
#writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
১২
বিষন্নতা হাওয়া ছুঁয়েছে। হয়তো কোনো শুভ্রতার আভেশে কিংবা নিরালয়ে। মিসেস ইয়ামিনি প্রাপ্তির এমন আচরনে একটুও ক্ষিপ্ত হননি তার কারণ রিত্তিক বাসা থেকেই বুঝিয়ে এসেছে যেনো, প্রাপ্তি কোনো অস্বাভাবিক আচরণ করলে তা সহজে মেনে নেয়।
প্রাপ্তির পাশে বসে আছে রিত্তিক। সে চুপসে আছে। কারণ সে জানে প্রাপ্তি তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে আছে। প্রাপ্তি বিছানা থেকে উঠে জানালায় হাত রেখে বলল,”আপনি কেনো আমার এই একাকীত্ব জীবনে এইভাবে আসতে চাইছেন? কেনো এই মাটির মানুষটাকে আবার ভাঙতে চাইছেন? বলুন কেনো..প্রাপ্তির শেষের কথাটা একটু চিৎকার করেই শোনা গেলো। রিত্তিক একটা হাফ ছেড়ে বললো, প্রাপ্তি আমি আপনাকে ভাঙতে নয় গড়তে চাইছি আমার ভালোবাসার স্নিগ্ধতায়। আমি আপনার জীবনকে এলোমেলো নয় সাজিয়ে দিতে এসেছি। আমি হয়তো আপনার তিশানের মতো করে ভালোবাসতে পারবোনা কিন্তু ওর মতো ভালো রাখার চেষ্টা করবো। আমি পুরো পৃথিবীটাকে জানিয়ে দিয়ে চায় ভালোবাসা নামক জিনিসটা সব কিছু করানোর ক্ষমতা রাখে। আমি আপনার কাছে কখনো স্বামীর অধিকার চাইনা শুধু সারাজীবন আপনাকে আমার পাশে চায়..এক নাগাড়ে কথাগুলো বলেই চলে গেলো রিত্তিক। প্রাপ্তির চোখ ছলছল করছে। সে আর নিতে পারছেনা এইসব। তিশানের জায়গা অন্য কাউকে! তা ভাবতেই বুকের ভেতর এক অজানা ব্যথা হচ্ছে।
হৃদের ফোনটা বেজে উঠতেই হৃদ সোফা থেকে উঠে চলে যায় বাইরে। ওপাশ থেকে একজন পুরুষনালি কন্ঠে কেউ একজন বলছে, হৃদ কতোদিন আর বন্ধুর বাড়িতে বেড়াবে? এইবার না হয় নিজের বাড়িতে চলে আসো। হৃদ নরম কন্ঠে বললো,জ্বি বাবা রিত্তিকের বিয়ের পর পরই চলে আসবো..এইটা বলেই কেটে দেয় সে। হৃদ সবার সাথে যেমনি হোকনা কেনো..নিজের বাবার কাছে সে পুরস্তম্বীত তরল পদার্থ। রাজশাহি থেকে অনেকদিন হলো রিত্তিকদের বাসায় উঠেছে সে শুধু রিত্তিকের জন্য। রিত্তিক লন্ডন থেকে ব্যাক করে কল দিতেই ঢাকা চলে এসেছে হৃদ। হঠাৎ হৃদের চোখ আটকে যায় বাগানের এক পাশে।
রওনক এর কানে ধরে নম্রতা বললো, ওহ এ তাহলে তোমার অফিস তাইনা? রওনক জোর করে কান ছাড়িয়ে দুই হাত কানে দিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেইস নিয়ে বললো, জানু বিলিভ করো..আমি কল্পনাও করিনি যে তুমি এইখানে থাকবে আর আমিতো সত্যিটা এই জন্য বলিনি যে, আমি যদি বলি আমি ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছি…তুমিতো আমাকে হাজারটা কথা শুনিয়ে দিতা। নম্রতা এইবার গলাটা ঝেড়ে বললো, থাক হয়ছে এক্টিং রাজ এখন একটু জড়িয়ে ধরেতো আমার একদম ভালো লাগছেনা এতো কাছে পেয়ে দূরে দূরে থাকতে…রওনক যেই নম্রতাকে জড়িয়ে ধরতে যাবে ঠিক তখনি কারো গলার আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে দুজন। রওনক পিছ ফিরে দেখে হৃদ। রওনক মনে মনে বললো, “এই রে কাম সারছে”। নম্রতা হেসে হেসে দৌড়ে চলে গেলো। আর হৃদ ধরলে রওনক কে। ” মিয়া তলে তলে ট্যাম্পু চালাও? দুজন একদিনের দেখাই ওই এতোটা? এরপরের দিনতো দেখা যাইবো রিত্তিকের না তোমার বাসর…এইটা বলেই হাহা করে হাসতে শুরু করলো হৃদ। আর রওনক ভ্যাবলা কান্ত।
প্রাপ্তি নিচে গিয়ে দেখলো সবাই চলে গেছে৷ নম্রতা এসে প্রাপ্তিকে বললো,আপুই…মিষ্টি মুখ কর..সামনের সপ্তাহে তোর বিয়ে….।প্রাপ্তি চমকে উঠলো..নাহ এই বিয়ে হতে পারেনা কিছু একটা আমাকে করতেই হবে।
অস্তিত্ব তুই ভেবে আমার বোনের সাথে প্রেম করছিসতো? না মানে জানিসইতো আয়মান কি বাঘিনী…রওনক কথাটা বলতে দেরি হয়েছে আয়মান অস্তিত্বের পাশ থেকে উঠে বালিশ ছোড়তে দেরি হয়নি।
কিরে মেঘ মন খারাপ? তানহার কথায় মেঘ মুচকি হেসে বললো, নারে। তানহা কিছু একটা ভেবে বললো, আচ্ছা হৃদ ভাইয়ার সাথে কথা হইছে? মেঘ বিস্ফোরতো হয়ে বলল,”ওর নাম ছাড়া আর কিছু নাই মুখে? তানহা তখনি চুপসে গেলো।আর মনে মনে ভাবলো “এই দুটার ২৪ ঘন্টাই রাগ-অভিমান লেগে থাকে। আল্লাহ এইডা কোন দুনিয়ায় লইয়া আইলা।
চলবে…..
#The_Magic_Of_Love
#পর্বঃ১৩
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
ছন্দহীন শহরে আজ প্রেমের হাহাকার। ভালোবাসার নিবোদিত আজ চারিপাশ কোলাহল। মা ওনার নাম্বার আছে তোমার কাছে? প্রাপ্তির মুখ থেকে ওনার নাম্বার আছে কিনা শুনে…ভ্রু কোচকে তাকালেন আলেয়া বেগম। বললো, কার নাম্বার? প্রাপ্তি ইতস্ত হয়ে বললো, মিস্টার রিত্তিকের নাম্বার। নম্রতা দৌড়ে এসে রসিকতার স্বরে বললো,ওহ…জিজুর নাম্বার? বাহ্ এতো তাড়াতাড়িই প্রেমে পড়ে গেলি আপু? প্রাপ্তি শক্ত চোখে তাকাতেই চুপসে যায় নম্রতা। নম্রতা মুখটা ভেঙে বললো,না মানে….ওনার নাম্বার তুই চাইলে আমি কালেক্ট করে দিতে পারি। প্রাপ্তি কিছু না ভেবে তাড়াহুড়ো করে বললো, হুম হুম দে।খুব দরকার।
রওনক জানো? আপু না? রিত্তিক ভাইয়ার নাম্বার চাইছে আমার কাছে .. ফোনের ওপাশ থেকে নম্রতার এই কথা শুনে ভীষম খায় রিত্তিক। রওনকের রুমে এসেছিলো একটা বই নিতে..এসে দেখে ইচ্ছেমতো ফোনের রিংটোন বাজছে। আর রওনক রুমে নেই ওয়াশরুমে তাই রিত্তিকই ধরতে হয়েছে। ধরতেই ওপাশ থেকে এমন কথা শুনে ভীষম খেলো। কারণ রিত্তিকের মাথায় ঘুরছে অন্য বিষয়। নম্রতার সাথে রওনক এর কথা! হাউ! এইসব পরেও ভাবা যাবে তাই বললো, নম্রতা আমি রওনক না রিত্তিক৷ আমার নাম্বার আমি মেসেজ করে পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমার আপুকে দিয়ে দিও। নম্রতা এইবার ঘাবরে কলটা কেটেই দিলো। মেসেজের টো টো আওয়াজ পেয়ে দেখলো নাম্বার।
হৃদ বেঘুরে ঘুমোচ্ছে তার কোনো হেলদোল নেই। ফোনের রিংটোন আসতেই বার বার কেটে দিচ্ছে। অবশেষে কল ধরতেই হলো৷ ঘুমঘুম কোন হারামজাদারে আমার এতো পাকা ঘুমটা ভেঙে দিলি? ওপাশ থেকে রাগী কন্ঠে কেউ বললো, হারামজাদা, কুত্তা… কতোদিন ধরে আজকে তোর খবর নেই কল দিসনা কেনো? এই তুই আমার বেষ্টু! হৃদের ঘুম উড়ে গেছে। বললো,মেঘ! বইন আমার তুই রাগ করিসনা। তোর ভয়েইতো কল দেয়নি বকা দিবি বলে। মেঘ বললো, আমি কে তোর বকা দিবো? আমিতো তোর কেউনা তাইনা? অভিমানের কন্ঠে এই কথাটা বলে মেঘ বললো,আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে এই গুড নিউজটা জানাতেই তোকে কল দিয়েছিলাম নয়তো কখনোই দিতাম না। আমি কারো আপন হলেতো কেউ আমার খবর নিবে তাইনা? বেষ্ট ফ্রেন্ড নামে নয় হৃদ কাজেও প্রকাশ পেতে হয় বাই..এইটা বলেই মেঘ কল কেটে দিলো। আর হৃদ মনে মনে ভাবলো.. এক বস্তা অভিযোগ করে বেষ্ট ফ্রেন্ড আমার রাগ করে কল কেটেদিলো!
আয়মান তুই এমনভাবে কাঁদলে হবে? বিয়েটাতো ভেঙে দিয়েছি। আজতো আমাকে যেতেই হবে সামনে এক্সাম। এইখানে পড়ে থাকলে হবে? তোকে আমার ঘরেতো নিতে হবে নাকি? আয়মানের চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো অস্তিত্ব। আয়মান কান্না স্বরে বলছে, আমি তোমাকে যেতে দিবোনা। অস্তিত্ব আয়মানকে বুকে নিয়ে বললো,এমন ভাবে বললে হবে পরী? আমাকেতো যেতেই হবে পরীক্ষা না দিয়ে পাশ করলে তোর আর আমার ব্যাপারটা জানাবো কি করে সবাইকে? আয়মান থেমে যায়। সে বুঝতে পেরেছে যেতেই হবে অস্তিত্বকে।
আমি আপনার সাথে আজ বিকেলে নীল ক্যাফে দেখা করতে চায় মিস্টার রিত্তিক। প্রাপ্তির কথা শুনে এক আনমনে হাসি দেয় রিত্তিক। যদিও ফোনে প্রাপ্তি তা শুনেনি। রিত্তিক গলা ছেড়ে বললো, হুম অবশ্যই দেখা করবো বলুন কয়টায় আসবো? প্রাপ্তি বললো, আড়াইটাই। প্রাপ্তি কল কেটে দিয়ে কথা সাজিয়ে নিচ্ছে কিভাবে রিত্তিককে বুঝাবে সে। আর এইদিকে রিত্তিক হাসছে কারণ সে জানে..প্রাপ্তি তাকে কি বলতে ডেকেছে।
ডেড রিত্তিকের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে..কান্না করে কথাটা বলতেই মিস্টার শেখ বললেন,চিন্তা করোনা সুইটহার্ট আমি সব রেডি করে রেখেছি…রিত্তিক খান্না তোমারি হবে।
স্যার আপনি বাংলাদেশে যাচ্ছেন? জুনিয়র ডক্টর প্রশ্নটা করতেই আর্জিব রাইদি হেসে বললেন,হুম আমার দেশে যাচ্ছি। জুনিয়র ডক্টর বললো,স্যার আপনাকে ছাড়া এইখানে আমার ভালোই লাগবেনা। আর্জিব রাইদি হেসে বললো, তোমাকে অনেক দূর এগোতে হবে তাই এইখানে থাকাটা জরুরী।
চলবে…..
#The_Magic_Of_Love
#পর্বঃ১৪
#Writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
তীব্র রোদ। চারিদিকে মানুষের আনাগোনার নেই কোনো কমতি। প্রাপ্তি মালিক কে বলে তাড়াতাড়ি সাইড ব্যাগটা নিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে একটা রিকশা ধরলো। উদ্দেশ্য.. রিত্তিকের সাথে দেখা করা।
রিত্তিক বার বার হাতের ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছে। ২ঃ১০ বাজছে। অথচ প্রাপ্তির দেখা নেয়। বিরক্তি নিয়ে উঠতে যাবে এমন সময় চোখ যায় রাস্তার পাশে রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিচ্ছে প্রাপ্তি। সাদা মাটা পোশাক পড়া সে। অথচ তার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে বিয়ে ঠিক হওয়া হবু বরের সামনে…কতো রকম ভাবে সেজে আসতো। অবশ্য প্রাপ্তির শ্যামবর্ণা মুখের মায়াটাই তার আসল সৌন্দর্য।
কালো ব্লেজার পড়া,চুলগুলো স্পাইক করা হাতে ফুটে থাকা ছেলেটির দিকে এক পলক তাকালো প্রাপ্তি। মিস প্রাপ্তি অলরেডি ১০ মিনিট লেইট.. একটু নেশাক্ত কন্ঠে কথাটা বললো রিত্তিক। প্রাপ্তি ইতস্তভাবে বললো, সরি আসলে,রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো। রিত্তিক গলা ঝেড়ে বললো, ইটস ওকে আমার কোনো প্রবলেম হয়নি হাজার হোক হবু বউ দোষ করেছেতো..শেষের কথাটা একটু আস্তেই বললো রিত্তিক যদিও প্রাপ্তির কান এড়াইনি। প্রাপ্তি একটু কাশি দিয়ে বললো,কিছু বললেন? রিত্তিক আমতা আমতা করে বললো না মানে ক কই কি বললাম? আচ্ছা বসুন। কি খাবেন বলুন..ওয়ে….রিত্তিক ওয়েটারকে ডাকতে যাবে তার আগেই প্রাপ্তি বললো, না না কিছু লাগবেনা। আমি কিছু কথা বলেই চলে যাবো সো এতো তাড়াহুড়োর দরকার নেই। রিত্তিক টেবিলে দুই হাত ভাজ করে বললো,আচ্ছা বলুন কি বলবেন।
প্রাপ্তিঃ আমার পক্ষে এই বিয়েটা করা পসিবল নয় তাই আমি চায় আপনি না করে দিন এই বিয়েতে। কারণ একমাত্র আপনিই পারেন যে কিনা এই বিয়েটা আটকাতে পারেন। রিত্তিক কিছুটা ভাবশেল হয়ে বললো, তো? আমি কি করতে পারি মিস প্রাপ্তি? প্রাপ্তি অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললো,আপনি কি করতে পারেন মানে? আপনি কি আমার কথাটা শুনেছেন ভালো করে? রিত্তিক চেয়ার থেকে উঠে বললো, দেখুন আমি জানতাম আপনি আমাকে এইটা বলতেই ডেকেছেন কিন্তু তবুও আমি এসেছি শুধুমাত্র আপনাকে এক পলক দেখতে। আপনাকে বিয়েটা আমিই করছি মিস প্রাপ্তি৷ একটা সুযোগ দেন আমায় আমি প্রমাণ করে দিবো ভালোবাসা সুন্দর ও শুভ্র। এইটা বলেই রিত্তিক আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে চলে যায়। আর প্রাপ্তি ঠাঁই দাড়িয়ে আছে। প্রাপ্তি বসে বসে ভাবছে, লোকটা এমন কেনো? কেনো বুঝতে চাইছেনা আমাকে? কেনো!
রিত্তিক এর মাথা অল্পতেই গরম হয়ে যায়।তবে সে ঠান্ডা মস্তিষ্কের বটে। সব কাজ ধাপে ধাপে সাজিয়ে করে। রিত্তিকের কি একটা যেনো হঠাৎ করে মনে আসতেই পকেট থেকে ফোনটা বের করে “প্রিয়শী আজ আপনি আমার না হলে অন্য কেউ আপনাকে নিয়ে নিবে যা আমি চায়না। কারণ আপনি মেয়ে। বিয়ে একদিন না একদিন হবে এইটাই স্বাভাবিক” এই মেসেজটা প্রাপ্তির ফোনে সেন্ড করে ব্লেজারটা খুলে গাড়ির পেছনে ফেলে দিয়ে গাড়ির সিটে পিঠ এলিয়ে কপালে দুই আঙ্গুল দিয়ে কপাল বুলাতে লাগলো। শার্টের বোতাম কয়েকটা খুলে দিলো। হাহাকার উত্তাপে ঘেমে একাকার রিত্তিক।
প্রাপ্তি ফোনে রিত্তিকের এমন মেসেজ দেখে অকারণের মুচকি হেসে ফেললো। হয়তো সে নিজেও জানেনা এই হাসির কারণ।
হৃদ জানিস? আমি না এখন বিয়েটা মোটেও করতে চায়নি কিন্তু ফ্যামিলির কারণে বাধ্য হতে হচ্ছে..এই কথাটা বলেই আনমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে মেঘ। ওপাশ থেকে হৃদ নিরব হয়ে আছে। হয়তো সে তার বেষ্ট ফ্রেন্ড এর কান্না উপলব্ধি করতে পারছে। ওপাশ থেকে হৃদ বললো, এই তুই একদম কাঁদবিনাতো একদম ভাল্লাগেনা। এমনিতি আমার চিন্তা হচ্ছে তোর হবু বরের জন্য। মেঘ হোট করে চোখের পানি মুছে আগ্রহী কন্ঠে বললো, এই তোর আমার জন্য কোনো চিন্তা নাই! চিন্তা হচ্ছে তাও আবার আমার জামাইয়ের জন্য? কেনো কেনো? হৃদ ওপাশ থেকে রসিকতার কন্ঠে বললো, বেচারা কতো বছর যে না খেয়ে থাকতে হবে আল্লাহ এই জানে। আর তুই যে সাজুগুজু করিস সেইসব কিনতে কিনতেই বেচারার মানিব্যাগ ফাঁকা হয়ে যাবে। হৃদের কথা শুনে মেঘ হাসবে না কাঁদবে ভাবতেই পারছেনা৷ আর ওপাশ থেকে ফিক করে হেসে দিলো হৃদ।
রওনক তুমি এখন শুধু আমার বয়ফ্রেন্ড নয় বেয়াই হও বুঝলা? চিপস খেতে খেতে কথাটা বললো নম্রতা। রওনক পানি খেতে খেতে বললো, ইশ ভাইয়ার অন্য জায়গায় বিয়ে হলে একটা সুন্দরী বেয়াইন পাইতাম। এখন পাইছিতো পাইছি গার্লফ্রেন্ড আর বেয়াইন দুইটা মিলিয়ে পুরাই পেত্নী রাণী। এইটা বলতেই নম্রতা এক ধাওয়া করলো যে রওনক দৌড়াতে দৌড়াতে পুরোই শেষ।
কিরে নিরা মন খারাপ? কথাটা শুনতে পেয়ে নিরান্বিতা পিছনে তাকালো। দেখলো অস্তিত্ব তার দিকে তাকিয়ে আছে। নিরান্বিতা আনমনে বললো, কিরে কখন এলি ঢাকা থেকে? আই মিন তোর খালামনির বাসা থেকে? অস্তিত্ব এপ্রোনটা এক হাতের উপরে রেখে নিরার পাশে বসে বললো, এইতো গতকাল রাতেই আসলাম। আমার পরীটা অনেক কান্না করেছে জানিস? ভাবছি পরীক্ষাটা শেষ হওয়ার পরই মাকে জানাবে আমার আর আয়মানের ব্যাপারটা। নিরান্বিতা একটু হেসে বললো, ওহ ভালোই। তোর বিয়ে খেতে পারবো অনেকদিন কারো বিয়ে খাইনা। এইটা শুনেই অস্তিত্ব হেসে ফেললো আর নিরান্বিতা এক মনে সে হাসি দেখছে। গেজ দাঁতগুলো এই হাসিটাকে একটু বেশিই আকর্ষিত করছে। আর মনে মনে ভাবছে, ইশ,অস্তিত্ব তুই যদি একবার আমার হতি!
চলবে…
#The_Magic_Of_Love
#পর্বঃ১৫
#writer:#মারশিয়া_জাহান_মেঘ
আজ সারা বাড়ী সাজানো হয়েছে। মেঘের বিয়ে। চারিদিকে হৈচৈ আর গান বাজনা। মেঘ হৃদকে কল দিয়ে বলেছে আসতে কিন্তু সেতো আসবেনা। সামনে রিত্তিকের বিয়ে কিনা! কিরে মেঘকে সাজানো হলো? দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কথাটা বললো মেঘের মা। ইতিমধ্যে মেঘের ফোনে কল এসেছে তার হবু বরের। কলটা ধরতেই ওপাশ থেকে নীড় বললো, মেঘ..কপালে রাঙাবতী টিপ দিও। মেঘ অবাক হয়ে বললো, এইটা বলতে কল করেছেন? নীড় আনমনে হেসে বললো, নীড় চৌধুরীর ওয়াইফ তুমি তাই…তোমার সৌন্দর্য দেখার দায়িত্ব আমারিতো বটে।
রিত্তিকের বিয়ের শপিং করবে বলে সারা বাড়ি মাথায় তুলে ফেলছে আয়মান। সে কিছুতেই তার ভাইকে ছাড়া যাবেনা। ওইদিকে রিত্তিক অফিস থেকে আসতে ক্ষণিক লেইট হবে তা কল দিয়ে জানিয়ে দিয়েছে ইয়ামিনি খান্নাকে। কিন্তু আয়মানকে কি আর সহজে বুঝানো সম্ভব। রওনক সোফায় বসে আয়মানের মাথায় আস্তে একটা চটি মেরে বললো, তোর মতো কি আর ভাইয়া বেকার! টপ টেনের মধ্যে ভাইয়া একজন বুঝলি? একা সামলাতে হয় তাকে সব। আয়মান মুখ ভেংচি কেটে বললো, ওইখানে হবু ভাবী আসবে আর ভাইয়া থাকবেনা? নিজের বউয়ের বিয়ের শাড়ী নিজেই নাকি পছন্দ করবে খুবতো বলেছিলো এখন এতো ব্যস্ততা দেখানোর কি আছে ঢং। হৃদ ভাই ভাইয়াকে একটা কল দাওতো।
ফোনের রিংটোন বাজতেই ফাইল গুলো রেখে রিসিভ করলো রিত্তিক। কল ধরতেই ওপাশ থেকে আয়মান উচ্চস্বরে বললো, ভাইয়া তুমি না আসলে কিন্তু তোমার বউকে পুরাতন শাড়ী দিয়ে বিয়ে করিয়ে আনবো। রিত্তিক বোনের কথায় হেসে বলে, কেনো কি হয়েছে? আয়মান বললো,ভাবীকে নিয়ে শপিংয়ে যাওয়ার কথা ছিলোনা আজ? রিত্তিক বোনের কথার মানে বুঝতে পেরে বললো, ওহ বুঝলাম। আচ্ছা বাবা তোরা আগে বের হ আমি শপিং মলে সময়মতো পৌঁছে যাবো।
গাড়ি থেকে সবাই নেমে শপিংমলে যেতেই অবশেষে নম্রতাকে একা পেয়ে রওনক হাত টান দিয়ে নিজের বুকে মিশিয়ে নেই নন্রতাকে। নম্রতা লাজুকভাবে চেয়ে আছে রওনকের দিকে। আর রওনক নেশাক্ত চাহনি নিয়ে। “কিরে পাবলিক দেখছেতো” হৃদের কথা শুনে হচকিয়ে উঠে রওনক আর নম্রতা। নম্রতা দৌড়ে চলে গেলো ভেতরে আর রওনক হৃদের সামনে। এই তোর কেইসটা কি বলতো? তুই বেয়াইন সাহেবার সাথে এমনভাবে প্রেম করছিস মনে হয়ে তোরা কতোদিনের পরিচিত।
রওনক আমতা আমতা করে বললো, আরে হৃদ ভাই কি যে বলোনা..একটু মজা করছি আর কি হাজারহোক ভাইয়ের শালিকা বলে কথা।
এই বলোনা কোন ড্রেসটা নিবো..ভিডিও কলে অস্তিত্বকে ড্রেস দেখিয়ে বললো আয়মান। অস্তিত্ব বার বার বলছে এইটা না ওইটা। ওইটা না এইটা। আয়মান এইবার চোখ রাঙাতেই অস্তিত্ব চুপসে গিয়ে বললো, গ্রিন কালারেরটা আর স্কাই কালারের টা নে।
প্রাপ্তি দাঁড়িয়ে আছে নম্রতা হৃদ আর রওনকের পাশে। এখনো রিত্তিক আসছেনা বলে হৃদ বিরক্ত হয়ে বললো,”যার বিয়ে তার খবর নাই,পাড়াপড়শির ঘুম নেই। হঠাৎ প্রাপ্তির চোখ পড়লো শপিংমলের নিচে গাড়ি থেকে নামছে রিত্তিক। সাদা শার্ট এর সাথে ম্যাচ কালার প্যান্ট বেশ মানিয়েছে তাকে। প্রাপ্তির হোশ ফিরতেই নিজেই নিজের মনকে বলছে, “না প্রাপ্তি মাতোয়ারা হসনা। তুই শুধুই তিশানের।
হুর পরী আপনি আমার সাথে আসুন। রিত্তিক প্রাপ্তির হাত ধরে শপিংমলের ভালো একটা ব্রাইডেল ড্রেসিং স্টলে ডুকে। রিত্তিক হাত ধরতেই অজানা এক শিহরণ হচ্ছে প্রাপ্তির সারা শরীরে। এই বুঝি তার হৃদপিণ্ড থমকে যাবে। রিত্তিকের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবতেই প্রাপ্তির কানে ফিসফিস করে রিত্তিক বললো, ” হুর পরী এইভাবে এই মায়াবী দুই আঁখি পল্লব নিয়ে তাকিয়ে থাকবেন না। নয়তো,আমার সর্বনাশ হয়ে যাবে যে। প্রাপ্তিকে রিত্তিক মেহেরুন কালারের একটা লেহেঙ্গা চুজ করে দিয়েছে বিয়ের জন্য৷ আর গায়ে হলুদের জন্যও একটা সুন্দর হলুদ রঙা লেহেঙ্গা কিনলো। প্রাপ্তি অবাক হয়ে বললো,এই হলুদ লেহেঙ্গা কেনো? রিত্তিক ডন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো, হলুদ অনুষ্ঠানের জন্য। প্রাপ্তি অন্যদিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো,না আমি লেহেঙ্গা পড়বোনা। রিত্তিক প্রাপ্তির হাতটা হেচকি দিয়ে একদম নিজের কাছে এনে বললো, না চাইলেও এইটাই পড়তে হবে আপনাকে শুধু আমার জন্য।
চলবে….