Drama_Queen_VS_Mr_Handsome,Part_5,6

0
1945

Drama_Queen_VS_Mr_Handsome,Part_5,6
Writer_Neela
Part_5
.
.
নীলা হাতে কফির গ্লাস নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। তার মানিকের প্রতি রাগ উঠছে এতো কিছু বলে ডাম্বো টাকে ফোলানোর ট্রাই করলো কিন্তু ডাম্বো টা কিছুই বললো না ? হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পিছনে ফিরে তাকালো ফিরেই মুচকি হাসলো___

মিহু: কি হয়েছে তোর?

নীলা ঘুরে দাঁড়িয়ে রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো ভ্রু কুঁচকে মিহুর দিকে তাকালো তারপর কফি তে হালকা এক চুমুক দিলো আর শুরু হয়ে গেলো তার রেডিও__

নীলা: আর বলিস না ঢিশমিশ এতো করে ডাম্বো টাকে বললাম তবুও মিস্টার হ্যান্ডসাম এর নাম্বার ফেসবুক আইডি কিছু দিলো না ?

মিহু: তুই পারিস ও। মিস করছিস অনেক?

নীলা: আবার জিগ’স এইটা আবার বলতে হয়।

মিহু: এই জিগ’স টা কি।

নীলা: আরে ঝান্ডুবাম মানে জিজ্ঞেস।

মিহু: তোর কাছে আর কতো নতুন নতুন ওয়ার্ড শুনবো কে জানে।

নীলা: ???

মিহু কিছু বলতে যাবে তার আগেই নীলার ফোন বেজে উঠলো রাত ১২ টা বাজে।

মিহু: তোকে এতো রাতে কে কল করলো। এই আবার কোনো ক্রাশ নয়তো তোর এক্স ক্রাশ নয়তো কারো মা বাবা যাকে তুই মারধর করেছিস।

নীলা: বলতে থাক ততোসময় এ আমার ফোন বেজে কেটেও যাবে তো বলি ফোন কেটে গেলে ব্যাক করবে কে? আমার ফোনের টাকা চলে যাবে আর তুই খুব ভালো করে জানিস এই নীলা কাউকে মিসড কল দেয় না ?

মিহু: উফফ তাহলে ফোন টা তুলছিস না কেনো‌

নীলা: জানু!! আমার পা টা না অনেক ব্যাথা দেখ নাড়াতে পারছি না তুই একটু নিয়ে আয়।

মিহু: হয়েছে আর ড্রামা করতে হবে না আর একটা কথা তুই না তোর ডায়লগ টা চেন্জ কর একই কথা শুনতে শুনতে কান পচে গেছে। [ফোন আনতে আনতে]

নীলা:টিনকু [ফোন টা নিজের হাতে নিয়ে] হ্যালো?

ছেলেটা: আসসালামুয়ালাইকুম মহারানী কেমন আছেন?

নীলা: বাহ আমি মহারানি কিন্তু আমার রাজা কে? আর ওয়ালাইকুম সালাম।

ছেলেটা: কেনো? আমি।

নীলা: ইশশশ বয়েই গিয়েছে ভয়েস শুনেছেন আপনার বুড়ো বুড়ো ভয়েস দেখতে তো আরো বুড়ো রাজা রা সবসময় বুড়ো ই হয়েছে আর সাথে আমাকেও বুড়ি করে ফেলেছেন রানি বানিয়ে তাও সাথে মহা যোগ করেছেন। রাজকুমারী বললে কি হতো?

ছেলেটা: আচ্ছা সরি।

নীলা: সরি কেনো? বাই দা ওয়ে? আপনি কে ফোন কেনো করেছেন মেয়ে মানুষের এর নাম্বার দেখলেই কল করতে ইচ্ছে করে ?

ছেলেটা: এক্সিকিউজ মি! নাম্বার এর পাশে লিখা থাকে না গার্লস নাম্বার বয়’জ নাম্বার।

নীলা: ওহ আচ্ছা যাই হোক না কেনো আপনি কি আমাকে চিনেন?

ছেলেটা: হুম চিনি
‌।
নীলা: কিভাবে?

ছেলেটা: তোমাকে দেখেছি তোমার ব্যাপারের সব ডিটেইল ও আমি জানি

নীলা: আমার ডিটেইল নিয়ে আপনি কি করেন লুডু খেলেন?

ছেলেটা: লুডু কেনো খেলবো।

নীলা: আমি একটা খেলা ই খেলতে পারি লুডু তাই আমার মুখে এই খেলার নাম ই শুনবেন।

মিহু হা করে তাকিয়ে আছে নীলার দিকে নীলা ঠোট কামড়ে বড়সড় চোখ করে চোখ টিপ দিলো মিহুকে মিহু হালকা কেশে বিছানা গুছাতে চলে গেলো।

ছেলেটা: ওহ আচ্ছা!!তো কেমন আছেন?

নীলা: আরে আচ্ছা কিসেমের লোক তো আপনি চিনি না জানি না ফোন দিয়েছেন এতো সময় কথা বলেছি আপনার ভাগ্য ফোন রাখেন আমি তো আমার এক্স ক্রাশ দের সাথে ১ মিনিট ঠিক মতো কথা বলেছি নাকি সন্দেহ। আর এমনিতেই আমার মুড টা আজ ভালো নেই প্রেজেন্ট ক্রাশ টা একটু বেশি ই ভাব ওয়ালা।

ছেলেটা: ওহ আচ্ছা বাই দা ওয়ে আমি আদনান।

নীলা: আপনি আধা নান নাকি পুরা নান সেটা শুনে আমি কি করবো আমাকে কি আপনার গ্ৰিল মনে হয় আমাকে ফোন করেছেন ফোন রাখেন।

ছেলেটা কে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না নীলা। মিহু হাত খোপা করতে করতে বারান্দায় এসে বললো _

মিহু: কিসের নান রুটি মানে কি বুঝলাম না।

নীলা ভাব দেখিয়ে কফিটা মুখে দিতেই চোখ মুখ বড় করে ফুক করে মিহুর মুখের উপর দিয়ে দিলো মিহু রাগি চোখে নীলার দিকে তাকিয়ে আছে।

নীলা: সরি ঝান্ডুবাম এইটা পুরো তেতো হয়ে গিয়েছে?

মিহু রাগে হনহন করতে করতে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
।।

সকালে,,,,

মিহু: নীলাআআ উঠঠঠঠ

নীলা: প্লিজ গলুমলু মিস ওয়ার্ল্ড আরেকটু ঘুমোতে দে।

“আসলে মিহু অতোটা মোটাও না কিন্তু নীলার থেকে মোটা তাই নীলা মিহু কে এইটা বলে ডাকে”

মিহু: তুই উঠবি সকাল সকাল সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে এখন তোকে ডাকতে এসেছি তোর ফেভারিট খিচুড়ি করেছি।

নীলা: আম্মুর নাকি তোর?

মিহু: আমার।

মিহু উঠে জানালার পর্দা সরিয়ে দিলো আর সব ঠান্ডা আবহাওয়ার মিষ্টি রোদ এসে নীলার মুখে পড়লো নীলা কম্বল টা তার চেহেরা থেকে নামিয়ে হাত টাত ছড়িয়ে নিলো। মিষ্টি এক হাসি দিয়ে বললো___

নীলা: গুড মর্নিং [চুল ঠিক করতে করতে।

মিহু: তোর গুড মর্নিং তোর কাছে রাখ জলদি উঠ নয়তো তোকে রেখেই দৌড় দিবো।

নীলা: তোর জগিং করতে ইচ্ছে হচ্ছে সকালে যাস নি কেনো এখন যাবি?

মিহু:নীলাআআআআআআআআআ

নীলা: আচ্ছা আচ্ছা উঠছি!! মিহু

মিহু:কি

নীলা: আর ৫ মিনিট ঘুমাই

মিহু:ওকে আমি তাহলে ভার্সিটি তে চলে যাই।

নীলা: এই না আমি পার হবো কেমনে?

মিহু: হায় আল্লাহ আমি ভাবলাম তুই আমার সাথে যাওয়ার জন্য মন খারাপ করছিস কিন্তু এখন তো দেখছি তুই রাস্তা পার হওয়া নিয়ে টেনশন করছিস?

নীলা:???
।।।
।।

সিএনজি থেকে নেমে মিহু ভাড়া দিলো তারপর নীলার একটা হাত ধরে, হাঁটা শুরু করলো একপ্রকার নীলাকে টানছে আর নীলা হাঁটছে রাস্তা পার হয়ে ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে লাগলো মিহু ও নীলা। হঠাৎ করে নীলা মিহুর থেকে হাত ছুটিয়ে নিয়ে নিজের জামা ঠিক করতে না করতেই সজোরে এক টান লাগলো নীলার। টান টা আর কেউ না মিহু দিয়েছে। নীলা অবাক চোখে মিহুর দিকে তাকালে মিহু রাগি চোখে একটা ছেলের দিকে তাকিয়ে বললো___

মিহু: দেখে হাঁটতে পারেন না নাকি।

নীলা এইবার বুঝতে পারলো তখন যদি মিহু কে টান না দিতো বড়সড় ধাক্কা লেগে যেতো। নীলা হালকা হেসে মিহুর দিক তাকিয়ে বললো ___

নীলা: ডিয়ার হবু বর, তোমার জন্য ঝান্ডুবাম মানে মিহু আমার অনেক খেয়াল রাখে।

।❣Drama_Queen_VS_Mr_Handsome❣
#Writer_Neela
#Part_6
.
.
ভার্সিটিতে বসে ‌ক্লাস করছে দুইজন। দুইজন বললে ভুল হবে একজন এমনিতেই ক্লাসে অনেক মানুষ আছে। নীলা মনোযোগ দিয়ে স্যার এর কথা শুনছে ব্যান্চ এর উপরে একটা পিপড়া কে দেখতে পেয়েছে যে কিনা খাবার সংগ্ৰহে ব্যস্ত নীলা সেই ব্যস্ত পিঁপড়া কে নিয়ে খেলছে আর মিহু কে ডিস্টার্ব করছে মিহু রাগি চোখে বারবার নীলার দিকে তাকাচ্ছে আর নীলা ইনোসেন্ট ভাবে তাকিয়ে বারবার মাথা সরিয়ে নেয়।

হঠাৎ মিহুর একটা ফোন আসলো মিহু ফোন টা রিসিভ না করে কেটে দিলো যে ফোন করছিলো তাকে মেসেজ দিলো___

নীলা: কে ফোন করেছিলো?

মিহু: আরে মানিক ফোন করেছে ওর নাকি আমাকে অনেক দরকার

নীলা: তোকে আবার ওর কিসের দরকার।

মিহু:‌ওয়েট সেটাই তো জানছি।

নীলা: বললো?

মিহু: হুম আজ ম্যাথ এক্সাম পরে ওদের স্কুলে নাকি একটা ছোট খাটো প্যারেন্টস মিটিং হবে তাই।

নীলা: তাহলে আর কি করার যা তাহলে।

মিহু:‌শোন তুই ভালো মতো রাস্তার সাইড দিয়ে সাইড দিয়ে হেঁটে যতোটুকু হাঁটার হাটবি তারপর রাস্তা পার হবি ।

নীলা: ঠিক আছে।

মিহু: না তবুও। এই শোন[পিছনের বেঞ্চ এর একজন কে]

মেয়েটা: হুম বল

মিহু: নীলা কে একটু রাস্তা পার করিয়ে দিস

মেয়েটা: এখন ও পার হতে পারিস না? বড় হবি কবে

নীলা: বড়‌ হবো না হুহ

মিহু: আচ্ছা আমি যাই

নীলা: তুমি ও সাবধানে যেও টাট্টা।

মিহু পিছন ঘুরে একটু মুচকি হাসলো তারপর চলে গেলো পিছনের দরজা দিয়ে।

ক্লাস শেষে___

মেয়েটা: এই নীলা যাবি না

নীলা:হুম হুম যাবো চল

নীলা আর মেয়েটা ভার্সিটি থেকে বের হতেই যাকে দেখলো হা হয়ে তাকিয়ে রইলো নীলা দৌড়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালো___

নীলা: আপনি???

নীল: হেই!!! হুয়াট আ কয়িনসিডেন্স। বাচ্চা একটা।

নীল হেসে দিয়ে চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে শার্টের প্রথম বোতামের সাথে ঝুলিয়ে দিলো তারপর এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে অন্য হাত দিয়ে নীলার মাথায় উপরের দিকে চুল গুলো আওলিয়ে দিতে বলতে আদর করো বাচ্চা দের দেখলে যেমন সবাই আদর করে মাথার চুল নষ্ট করে দেয় ঠিক সেভাবে।

নীলা নাক মুখ ফুলিয়ে নিজের চুল ঠিক করে নিলো___

নীলা: খবরদার আমাকে বাচ্চা বলবেন না ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।

নীলা: কুল রিলেক্স তোমাকে বাচ্চা বলবো না তো কি বলবো তোমার আচরন চলাফেরা ফেস সবই বাচ্চা বাচ্চা লাগে।

নীলা: নাআআআআআআ আমি বাচ্চা না বাচ্চা আপনার মেয়ে হুহ।

নীল: তা অবশ্য ঠিক বলেছো আমার মেয়ে তো একদম বাচ্চা ই্

নীলা: ওয়েট আ সেকেন্ড আপনার মেয়ে আছে?

নীল: হুম কেনো?

নীল হেসে গাড়ির সাথে হেলান দিলো আর এক পা উঁচু করে গাড়ির সাথে লাগিয়ে রেখেছে।

নীলা: আপনি না আপনার পরিবারের সবার ছোট ছেলে? আপনার বিয়ে হয়ে যেয়ে বাচ্চা ও হয়ে গিয়েছে।

নীল: হুয়াট!!!

চমকে যেয়ে নীল সোজা হয়ে দাঁড়ালো___

নীল: মানে কি আমি বিয়ে‌ করেছি কখন বললাম

নীলা: তো বিয়ে না করলে বাচ্চা হইছে কিভাবে?

নীল; আরেএএএ আমার বড় আপুর মেয়ে মানে আমার ও মেয়ে রাইট।

নীলা: আগে বলবেন না শুধু শুধু ভয় পাইয়ে দিচ্ছেন।

নীল: চলো তোমায় দিয়ে আসি

নীলা: একটা শর্ত

নীল: কি?

নীলা: হেঁটে যাবো

নীল: কেনো? গাড়ি এনেছি তো

নীলা: গাড়ি তো আপনার বন্ধু নিয়ে গিয়েছে ?

নীল:ওহ শিট!!! তাহলে রিকশায় চলো

নীলা: না আমি পরপুরুষ এর সাথে রিকশায় বসি না।

নীল:ওহ গড। তুমি আসলেই একটা চিজ

নীলা: কি বললেন

নীল: বলবো না ?

নীলা:বলুন বলছি

নীল: এই পেত্নী বেশি বকবক না করে হাটো তো

নীলা: এই আপনি আমাকে পেত্নী বলছেন কেনো? আপনি আমাকে কোন দিক দিয়ে পেত্নীর মতো দেখলেন হুম

নীল: পেত্নীরা এক নিঃশ্বাসে কথা বলে নিঃশ্বাস বন্ধ করে না
‌।
নীলা: আপনি ঠাকুমার ঝুলি দেখেন নি সেটার মধ্যে পেত্নী রা প্রত্যেক ওয়ার্ডে দম ফালায়

নীল: আরে ওটা তো কার্টুন এ আমি রিয়েল এ পেত্নী দেখেছি

নীলা: কোথায়?

নীল: বাসায় যেয়ে আয়না দেখো তুমি ও দেখতে পারবে

নীলা কথা টা বুঝতে না পেরে দাঁড়িয়ে গেলো এতোক্ষণে নীল দৌড়ে পালালো নীলা যখনি বুঝতে পারলো নীলা ও নীলের পিছু পিছু দৌড়।
‌।
নীল: এই পেত্নী পড়বা তো

নীলা: আপনি কি হ্যা,,,,আপনি তো খোদার গজব পড়বে দেইখেন, নাইজেরিয়ান এনাকন্ডা, ঝুলে থাকা সাপ, বট গাছের আজরাইল, রাক্ষস, বেইমান এর বেইমান, বজ্জাত,খাটাস,খবিস,উল্লুক, ভাল্লুক, বদমাইশ,লাল বাদর,সাদা ইঁদুর, কুমির এর নানি, গন্ডার এর দাদা, পচা ডিম,পচা কুমরা,পচা লাউ, নাইজেরিয়ান এনাকন্ডা,লাল খবিস,ভেম্পায়ার,নীল তিমি,হাঙর মাছ, মহিষ এর পা, ষাঁড়ের শিং, টিকটিকির লেজ,ভুতুম পেঁচা….

নীল: বকবে যেহেতু এট লিস্ট লিরিক্স টা তো ঠিক মতো বলতে শেখো ভুতুম না মূর্খ হুতুম

নীলা: এই আপনি কিন্তু আমাকে ইনসাল্ট করছেন

নীল: ইনসাল্ট করার মতো কাজ করলে বলেই ইনসাল্ট করলাম নয়তো করতাম নাকি।
‌।
নীলা: আপনাকে আমি আমার নিউ ব্র্যান্ড চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুঁচি কুঁচি করে আপনার টমি কে খাওয়াবো।

নীল: আমার টমি যখন মাংসটার স্মেইল নিয়ে শুনবে এইটা আমি তখন তোমার পিছনে দৌড়াবে ওর নিউ ব্র্যান্ড দাঁত দিয়ে তোমাকে কুঁচি কুঁচি করার জন্য

নীলা: আম্মুউউউউউউউউউ ???? আমি আর কথা বলবো না আপনার সাথে আপনি একা একাই চলে যান

নীল: আরে পাগল নাকি দেখো এমন নেকামি কান্না করে কি বুঝাতে চাও শুনি

নীলা: আমার চোখের পানির আপনার কাছে কোনো দাম নেই

নীল: চোখ দিয়ে পানি পড়লে তো দাম থাকতো তুমি তো চোখ দিয়ে পানি ই বের করছো না
‌।
নীলা: ধ্যাত ভালো লাগে না

নীল: আমার সাথে কথায় হেরে গিয়েছো বলেই ভালো লাগছে না।

নীলা: এই যে মিস্টার শুনুন এই নীলা না হারতে শিখেনি

নীল: ওউউউ আচ্ছা সেটা সময়েই দেখা যাবে।

নীল আর নীলা সোজা হাঁটতে শুরু করলো নীলা লক্ষ্য করছে অনেক মেয়েরাই নীলের দিকে তাকাতে তাকাতে যাচ্ছে চলে যাওয়ার পর আবার ফিরে নীলের দিকে তাকাচ্ছে। এইবার নীলা নীলের দিকে তাকালো নীল মেয়েদের দিকে ‌মুচকি তাকিয়ে হাসছে তাদের হাই দিচ্ছে। একটা মেয়ে ‌নীলকে দেখে চোখ টিপ দেওয়ায় নীল যেই চোখ টিপ দিতে যাবে___

নীলার ব্যাগ থেকে স্কারফ বের করে নীলের চোখে বেধে দিয়ে নীলের কলার টেনে হাঁটতে লাগলো আর নীলার মুখে অন্যরকম মুড দেখা যাচ্ছে আর নীল চোখ বাধা অবস্থায় বাঁকা হেঁসে নীলার সাথে হাঁটা শুরু করলো। কিন্তু নীল প্রথমে সত্যি অবাক হয়েছে প্রথমে।

নীল: এই নীলা।

নীলার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত অনুভূতি হলো এই প্রথম নীলা বলে ডেকেছে নীল তাকে।

নীল: চোখ বাঁধার কারন কি

নীলা: আপনার চোখের মনির মধ্যে শুধু একটা মেয়েই থাকবে সেটা আমি অন্য কারো দিকে তাকানোর জনু ভুলেও চেষ্টা করবেন না।

নীল: মানে!
‌।
নীলা: কিছু না।

নীল হালকা হাসলো নীলার এই জেলাসি টা তার বেশ লাগছে অবশ্যই রাস্তার অনেকেই হয়তো তাদের দিকে তাকিয়ে আছে এতে কোনো যায় আসে না নীলের।

নীল: আচ্ছা যদি কারো দিকে তাকানোটা আমার অপরাধ হয়ে থাকে তাহলে আর কারো দিকে তাকাবো না রাস্তায় বারবার পরে যেতে নিচ্ছি

নীলা: ওকে নিজেই খুলে ফেলুন।

নীল‌ নিজের হাত দিয়ে নিজের চোখ টা খুলে নিলো। তারপর নীলার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। দু’জন মিলে মারামারি করছে আর হাঁটছে এমনিতেও শীতের সময় একটু ঠান্ডা পরেছে আর বিকেল হয়ে আসছে শীত টা যেনো আরো বাড়ছে এমন সময় নীলার চোখ পড়লো গাছের নিচে আশ্রয় নেওয়া একজন বৃদ্ধা মহিলার দিক আর তার সাথে একটা বাচ্চা।
‌।
নীলা; চা খাবেন?এই সময় কিন্তু চা খাওয়ার মজাই আলাদা।

নীল: তাহলে চলো কোনো ক্যাফে যে বসি এইদিকে আশেপাশে কোনো ক্যাফে আছে?

নীলা: হুম আছে।

নীল ‌আর নীলা হেটে টং দোকানের সামনে বসা আর সেই টং দোকানের পাশের গাছেই আশ্রয় নেওয়া দু’জন।

নীলের খুব ইচ্ছে করছে তাদের সাহায্য করতে এমন কাউকে রাস্তায় দেখলে সে কখনো পিছপা হয় না কিন্তু আজ ‌সে দেখতে চাচ্ছে নীলা কি করে কেননা নীল এই কাল আর আজ নীলার সাথে মিশে বুঝে গিয়েছে নীলা কেমন প্রকৃতির মেয়ে।

নীল: তুমি টং দোকানে চা খাও?

নীলা: অবশ্যই। আপনি খান?

নীল: হুম চা সবসময় বাসায় আর টং দোকানে বেস্ট হয় আমার তো খুব প্রিয়।

নীলা: হাইফাইভ।

নীল ও নীলার সাথে তালি বাজালো। নীলা হঠাৎ টং দোকানের লোক কে দেখে বললো___

নীলা: কি চাচা চেনো না আইছি কোনো খবরই নাই তোমার

চাচা: কি করমু কও তুমি তো কথা কইতাছিলা
‌।
নীলা:আরে আমি কথা কইতাছি দেইখা কি তুমি কথা কইবা না দেখো চাচা রাগ হইয়া যামু যদি আর কোনোদিন দেখছি এমন।

চাচা: আচ্ছা আর হইবো না তোমার লগে ইনি কেডা?

নীলা: তোমার জামাই পছন্দ হয় নাকি চাচা?

নীল অবাক চোখে নীলার দিকে তাকালো নীলা বড়সড় একটা চোখ টিপ দিলো নীলকে নীল কাশতে লাগলো। কিন্তু একটা বিষয় বেশ লাগছে সবধরনের পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারে মেয়েটা। নীল মনে মনে যেমন একটা মেয়ে চেয়েছিলো নীলা ঠিক তেমন।

নীলা: আরে চাচা মজা করলাম। ঐ যে মিহিকা আছে না আমার খালাতো‌ বোইন ওর ভবিষ্যতের দেবর মিহিকার বিয়া ঠিক হইছে তো।

চাচা: হাছা নি যাক আলহামদুলিল্লাহ সুখবর দিলি রে মা তো মিহিকা কই

নীলা: মিহিকা রে তো চেনোই

চাচা: হইছে বুঝছি এই নাও চা।

লোকটা নীলার হাতে দুই কাপ চা ধরিয়ে দিলো।

নীলা: চাচা আরো দুইডা বানাও দেহি।

চাচা: তোমার ‌নাম কি বাবা।

নীল: চাচা আমার নাম নীল।

চাচা: তোমাগো দুইজনরে কিন্তু বেশ মানায়।

নীল আড়চোখে নীলার দিকে তাকালো নীলা খানিকটা লজ্জা পেয়ে আশে পাশে তাকাতে লাগলো। নীল হেসে দিলো।
‌।
চাচা:এই নাও আরো দুই কাপ।

নীলা:এই আপনি আমার টা নেন তো

নীলা নিজের চা টা নীলের হাতে দিয়ে দুইকাপ চা নিয়ে উনাদের দিলো। এইবার নীল হেসে দিয়ে বেঞ্চে চায়ের কাপ রেখে বাচ্চা টাকে কোলে তুলে নিলো। বাচ্চাটার গায়ে আলগা ধুলো ছোট একটা নিমা পড়া আর দুইটা ঝুটি করে বাচ্চা টা বেশি হলে দুইবছরের হবে। নীল বাচ্চা টার পেটে হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো__

নীল: খুদা লাগছে বুঝি

বাচ্চাটি একবার বৃদ্ধা মহিলার দিকে তাকালো বৃদ্ধা মহিলা হাসলো। বাচ্চা টা দেখে হাসি দিয়ে নীলের দিকে তাকিয়ে আচমকা নীলের গালে চুমু খেলো___

নীলা: অউউউ কি কিউট

নীল: হুম অনেক।

নীলা: চাচি আপনি এইদিকে কেনো? বাসা কই আপনার

চাচি: আর বইলো না মা পোলা আর বউ এর বিয়া হইছে কিন্তু বউ নাকি বাচ্চা নিবো না কিন্তু তখন ওর পেটে এই মাইয়াডা আইয়া পড়ছিলো জোর যাবস্তি অনেক যুদ্ধ কইরা বউরে মানাইছি জানি বাচ্চা টা রাখে কিন্তু প্রতিদিন সব ধরনের কটু কথা শুনতে হইতো বাচ্চা টা হওয়ার পর থেকে বাচ্চা টার দিকে মুখ ফিরা তাকায় ও না আর পোলাডা বউ পাগল বউ কইছে আমারে বাসা থেইকা বাইর কইরা দিতে পোলা আমারে বাসা থেইকা বাইর কইরা দিলো আর বউ ডা বাচ্চা টারে আমার কোলে দিয়া দিলো জুতা নেওয়ার ও টাইম দেয় নাই।

নীলা: ছিঃ এমন মা ও দুনিয়াতে আছে।

নীল: এই পিচ্চি তুমি ‌দুনিয়ার দেখছো কি আরো কতো কতো কাহিনী আছে শুধু শুধু কি পিচ্চি বলি নাকি

নীল: এই পিচ্চির নাম দেওয়া হয়েছে?

চাচি: না

নীলা: সেকি এখনো নাম দেন নি

চাচি: খুইজা পাই না

নীলা:কাল ই ওর নাম দিবো।

নীল:আচ্ছা দিও এমনিতেও তো পড়াশোনা নাই।

নীলা: হুহ

নীল: আচ্ছা বাবু তুমি একটু এইদিকে বসো আমি আসছি

নীলা: আরে আরে কই যান

নীল: আসছি।

নীল কিছু টা দুরে গিয়ে একজনের সাথে ফোনে কথা বললো নীলা উনাদের সাথে কথা বলছে।

নীল: বেবি চলো চাচি আপনি আসেন

নীলা: আমরা কোথায় যাচ্ছি উনাদের জন্য একটা বাসা দেখেছি দুই রুমের এই তো পাশেই।

নীলা: ওয়াও এতো জলদি। বাট টিনসেট নাকি ফ্ল্যাট

নীল: ফ্ল্যাট গাধি

নীলা: উফফফফফফ। চাচি আপনি এই জুতা টা পড়েন।

চাচি: তুমি কি পড়বা?

নীলা: আরে চাচি আমার তো জুতার কালেকশন আছে আমার জামাই বাচ্চা নাই তো কি হইছে জুতা জামা ফোন আছে হিহিহি।

নীলা আর চাচি পিছনে হাটছিলো নীল বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে সামনে হাঁটছে নীলার কথা শুনে পিছন ঘুরে নীলার দিকে তাকিয়ে সামনে তাকিয়ে হেসে দিলো।

চাচি: তারপরও আমি নিতে পারুম না

নীলা: নিবা না? না নিলে কান্না করে দিবো তুমি কি চাও আমি কান্না করে দেই।

চাচি: আচ্ছা পড়ছি

বাসা বেশি একটা দুর ছিলো না কিছুক্ষণ যেতেই বাসায় উঠলেন তারা।

নীল:শুনুন আমি কাল আসবো আপনাদের জন্য কিছু কেনাকাটা করে নিয়ে আসবো আর শুনুন এই বাসায় এডভান্স দেওয়া শেষ আরো একটা কথা আমি প্রতি মাস এসে ভাড়া দিয়ে যাবো।

নীলা: বাপরে সব কথাতে নিজেকে নিয়ে বলছেন কেনো? আমাকে নিয়েও বলেন।

নীল: ওহ হুম এই মেয়ে আপনাকে জ্বালাতে চলে আসবে।

নীলা মুখ ফুলিয়ে বসে পড়লো। নীল মুচকি হেসে দিলো আর বাঁকা হেসে নিজের হাসি থামালো__

নীল: তুমি এইদিকে বসো আমি উনাদের জন্য রাতের খাবার নিয়ে আসি

নীলা: আমার জন্য নুডুলস

নীল: তোমার জন্য না উনাদের জন্য

নীলা: ওকে তাহলে আইসক্রিম

নীল: এই শীতে তোমাকে আইসক্রিম খাওয়াবো আমি তাই না

নীলা: হুহ থাক কিছু আনতে হবে না

চাচি: তোমরা কি বর-বউ

নীল আর নীলা দুইজন দুইজনের দিকে তাকালো নীল কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো নীলা মাথা নাড়িয়ে না বোধক জানালো।
।।

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ওরা দুইজন চাচি আর বাচ্চা টা থেকে বিদায় নিয়েছে একটু আগে এখন রাস্তায় হাঁটছে।

নীল: তোমার ব্যাথা লাগছে না

নীলা: একদম না আমার তো কক্সবাজারে থাকলে যেমন ফিল হয় তেমন ফিল হচ্ছে ওয়াও ?

নীল:বাচ্চা পাগলি একটা

নীলা:বাচ্চা পাগলি হবে আপনার বউ হুহ

নীল: ওহ আচ্ছা

নীলা আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না নীল কোলে তুলে নিলো নীলাকে



চলবে,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here